আপনি মানসিক রোগী কিনা বুঝবেন কিভাবে?


ওসিডি বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার একটি স্নায়বিক ও মানসিক রোগ। রোগটি অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারে আক্রান্তরা এক ধরনের অযৌক্তিক বা অনাকাঙ্ক্ষিত চিন্তায় ভোগেন। আসুন জেনে নেই আপনি মানসিক রোগী কিনা তা বুঝবেন কিভাবে? বিস্তারিত জানাচ্ছেন সত্যজিৎ পাল-
ওসিডি কেন হয়: অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। তবে কিছু কিছু বিষয়কে এই রোগের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ভাবা হয়। যেমন জীনগত কারণ, বায়োলজিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল কারণ, মানসিক চাপ, শিশু নির্যাতন ইত্যাদি। সুতরাং আপনার শিশুকে অতিশাসন বা বেশি চাপ প্রয়োগের আগে আরেকবার ভাবুন, তাকে অসহ্য মানসিক যন্ত্রণাদায়ক রোগ অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো?
রোগের লক্ষণ
• কাল্পনিক চিন্তা এবং এই চিন্তা-ভাবনাগুলো রোগীর মনে বারবার দেখা যায়। অনেক চিন্তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক হলেও রোগী ইচ্ছে করলেই সেই চিন্তা ত্যাগ করতে পারেন না।
• যে কোন জিনিস বারবার চেক করা, যেমন বাসা থেকে কোথাও ঘুরতে বেরিয়ে বারবার ফিরে গিয়ে চেক করা- দরজায় তালা লাগানো হয়েছে কিনা। বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস।
• অদ্ভুত সব সমস্যা বা প্রশ্ন নিয়ে রোগী প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকেন, কিন্তু সেসব প্রশ্নের সদোত্তর মেলে না।
• কেউ কেউ কোন কথা বারবার বলে তার নিকটাত্মীয়কে বিরক্ত করেন, অথচ যা একবার বললেই হয়।
• এ রোগে আক্রান্ত অনেকে সবকিছুতেই ‘কিন্তু’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না, অর্থাৎ বিভ্রান্ত থাকেন।
গবেষণা: নিউইয়র্ক সিটির সেন্টার ফর কগনিটিভ-বিহেভিওরাল সাইকোথেরাপির ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর সাইকোলজিস্ট স্টিভেন ফিলিপসন এ সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘আমাদের বেঁচে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ যে কোন বিষয়ে সতর্ক করার জন্য শর্তযুক্তভাবে মস্তিষ্কটি রয়েছে। কিন্তু নিয়মটি ওসিডির ক্ষেত্রে অকার্যকর। ওসিডি মানসিক কষ্টের সুনামি, যা আপনার মনোযোগ সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ করে রাখে।’
রোগের সমস্যা
১. প্রায় ৬৭ ভাগ রোগী বিষণ্নতায় ভোগেন।
২. যে ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে এ রোগ আছে, তারা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে পড়েন। পরীক্ষার সময় আগের পাতায় কি লিখেছে, তা বারবার চেক করার ফলে পূর্ণ নম্বরের উত্তর লিখতে পারেন না।
৩. কাজ-কর্মে ধীর গতি দেখা যায় ও প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন থাকেন।
৪. মেয়েদের মাসিকের সময় অস্বস্তি বেড়ে যায়।
৫. বিবাহিত জীবনে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। ফলে ডিভোর্সের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৬. অনেকের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়।
প্রতিকার: কারো মধ্যে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা গেলে দ্রুত মানসিক রোগের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
লেখক: ফার্মেসি বিভাগ, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বনানী, ঢাকা।

Comments

Popular posts from this blog

মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবেন যেভাবে